Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
লালদিঘি মসজিদ
স্থান
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের লালদিঘি নামক স্থানে অবস্থিত
কিভাবে যাওয়া যায়
বংপুর জেলা শহর থেকে পশ্চিম দিকে পাবর্তীপুর গামী পাকা সড়ক দিয়ে আনুমানিক ৩৫ কি:মি: ‍দূরে যেকোন যানবাহনে মসজিদটিতে যাওয়া যাবে।
বিস্তারিত

 বদরগঞ্জ থানা থেকে পার্বতীপুর গামী পাকা সড়ক হয়ে টেক্সের হাট থেকে প্রায় ৪ মাইল উত্তর দিকে লালদিঘি হাটের ও লালদিঘি  (পরিমাপ আনুমানিক ৫০০x৫০০ ফুট) নামে একটি প্রাচীন পুকুরের পশ্চিম দিকে মসজিদটি অবস্থিত । স্থানীয়ভাবে মসজিদটির পরিচিতি হলো লালদিঘি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি বর্গাকার। পরিমাণ প্রায় ২৪ ফুট-৬ইঞ্চি x ২৪ ফুট-৬ইঞ্চি। প্রতিটি কোণায় অষ্টকোণাকৃতি  মিনার/স্তম্ভ রয়েছে যার নিম্নাংশ কলসাকৃতি এবং তার উপরিভাগে কারুকায’ রয়েছে। এ মসজিদে তিন সারিতে তিনটি করে নয়টি ছোট ছোট গোলাকার গম্বুজ রয়েছে এবং শীর্ষদেশে শোভা পাচ্ছে প্রষ্ফুটিত পদ্ম ফুল সদৃশ শিরোচুড়া বা ফিনিয়াল এবং নিম্নাংশে ড্রামের মারলন অলংকরণ ছিল। এখন কিছুটা অস্পষ্ট। মসজিদের প্যারাগেটে উভয় দিকে মারলন অলংকরণ সমৃদ্ধ দেখা যায়। এগুলোকে চুনসুড়কি মিশ্রিত উপাদান দিয়ে তৈরি করা স্ট্যাকু অলংকরণের অর্ন্তভূক্ত করা যেতে পারে।

মসজিদটির সামনের দেয়ালে দৃশ্য অত্যন্ত চমৎকারভাবে নানান প্যানেল দ্বারা সুশোভিত করা হয়েছে। সম্মুখ দেয়ালে বহু ভাঁজবিশিষ্ট খিলানসদৃশ্য তিনটি প্রবেশ দার রয়েছে। পরিমাপ ৫ ফুট ১ ইঞ্চি x২ ফুট ২ ইঞ্চি। উভয় দরজার ডানে ও বামে দেয়াল ঘেষে পিলাস্টার স্তম্ভের সন্নিবেশ দেখা যায়। অন্যান্য  তিন দিকের দেয়ালগাত্রেও একই পদ্ধতিতে সম্মুখভাগের দেয়ালের অনুকরণে প্যানেল অলংকরণ করে দেয়ালের শোভা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়াও  মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালগাত্রেও হানিকাম বা জালিযুক্ত খিলানাকৃতি জানালার মতো রয়েছে যা মুলতঃ আলো-বাতাস গমন বা নির্গমনের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

মসজিদের অভ্যন্তরীণ পরিমাপ ২২ফুট-৪ইঞ্চি x২২ফুট-৪ইঞ্চি। প্রতিটি গম্বুজ পেনডেন্টিভ খিলান ও স্কুইস্নের উপর স্তর করে তৈরি বলে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়াও চারটি স্তম্ভ পিলার) অষ্টকোণাকৃতি মসজিদের অভ্যন্তরে দেখা যায় যা, মসজিদের গম্বুজগুলোর জন্যই নির্দিষ্ট হয়েছিল। এ চারটি স্তম্বের নিম্নাংশ আবার আয়তকার প্রকৃতির। সর্বাপেক্ষা মধ্যস্থানে অবস্থিত গম্বুজের নিচে দম্ভাকৃতি (টিথ ডিজাইন) ও স্কুইন্সগুলোতেও একইভাবে অলংকরণ করা হয়েছে। সর্বপরি এ মসজিদের অভ্যন্তরে ’আইল’ ও বে’র উপস্থিতি বিদ্যমান। ফলে নামাজিদের নামজে দাঁড়াতে কোন অসুবিধে হয় না।

পশ্চিম দেয়ালের মধ্যবর্তী (অভ্যন্তরীণ) মিহরাবের পরিমাপ ৫ ফুট-৬ ইঞ্চি x ১ ফুট -৯ইঞ্চি। মেহরাবের শীর্ষদেশ বহুভাঁজ বিশিষ্ট খিলানসদৃশ্য এবং ডানে ও বায়ে উভয় দিকে (শীর্ষদেশ) ক্যাপিটালযুক্ত ক্ষীণস্তম্ভ (পিলাষ্টার) রয়েছে এবং নিম্নাংশ কলসাকৃতি। মিহরাবের উভয়দিকে অবস্থিত খিলানের পরিমাপ ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি ২ ফুট- ৫ ইঞ্চি। মিহরাবের অলংকরণ বৈভবতার সঙ্গে পুরোপুরি সাদৃশ্য রয়েছে।

প্রতিটি দেয়ালের (অভ্যন্তরীণ) গাত্রে ২টি করে ছোট ছোট কুলঙ্গী রয়েছে যা মুলত প্রদীপ বই-পুস্তক ইত্যাদি রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আলোচ্য মসজিদটির ভেতর ও বাইরের দেয়াল গাত্র অত্যন্ত চমৎকারভাবে চুনসুরকির আস্তরণে আবৃত করা হয়েছে। বর্তমান গঠন কাঠামো ও স্থাপত্যশৈলী দৃষ্টে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, এটি সম্ভবত বৃটিশ আমলের শেষ মোঘল-যুগের মসজিদে ব্যবহৃত গঠন পদ্ধতি ও স্থাপত্য শৌকর্ষ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল।

মসজিদটির সামনে একটি খোলা অঙ্গণ রয়েছে যা স্থানীয় ভাবে বেষ্টনী প্রাচীর তৈরী করে মসজিদ পরিবেশকে পবিত্র ও নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বেষ্টনী প্রাচীরের পূর্ববর্তী মাঝামাঝি আধুনিক কৌশলে প্রবেশ দ্বার নির্মাণ করা হলেও নানান অব্যবস্থাপনা হেতু ভীষনভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। মসজিদটিতে কখনো কোন জায়গায় শিলালিপি স্থাপিত ছিল কিনা তারও কোন আলামত লক্ষ্য করা যায় না। এই মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্ব ঘেষে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রংপুর জেলা কালেক্টরেট থেকে সংগৃহীত সাবেক খতিয়ান নং-৪৪২১ সূত্রে জানা যায় যে, মহারাজ শ্রী শচীন্দ্র নন্দী পক্ষে কোড অব ওয়ার্ডস ২১৯ প্রতিভাবান দেবী চৌধুরানী ১৯ জমিদারী আমলে ১৯১ দাগে ১৪  শতক জমির উপরে মসজিদটি নির্মিত হয়।জানা যায় যে, ঐ সময় এই এলাকায় দারুণ পানি সংকট ছিল।  স্থানীয় পানি সংকটের অবসানসহ মসজিদের নামাজিদের ওজু, গোসলের নিমিত্ত ও মসজিদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে উক্ত দিঘিতে মাছ চাষের ব্যবস্থাও ছিল। উক্ত দিঘি খননের সময় প্রচুর লালমাটি অপসারণ করা হয় এবং দিঘির চার পারে রাখা হয় ফলে স্বাভাবিক ভাবে এই মসজিদদের পরিচিতি দাঁড়ায় ’’লালদিঘি মসজিদ’’হিসেবে। মসজিদটি ওয়াকফ তালিকাভূ্ক্ত।